২১ নভেম্বর ২০২৫, ০৭:২৬ পূর্বাহ্ন, ২৯শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি, শুক্রবার, ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
এস.এম. সাইফুল ইসলাম কবির, সুন্দরবন থেকে ফিরে:
বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনে হরিণ শিকারের ভয়াবহতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বন বিভাগের নিয়মিত অভিযানে সদ্য উদ্ধার হয়েছে ১০,৬০০ পিস শিকারের ফাঁদ এবং তিনটি নৌকা। গত তিন মাসে কেবল কোস্টগার্ড ও বন বিভাগের অভিযানে ৬৪১ কেজি হরিণের মাংস উদ্ধার হয়েছে, আটক করা হয়েছে ২২ জন চোরাশিকারিকে।
⚠️ শিকার ও পাচারের চিত্র
সুন্দরবনের কচিখালি, চান্দেশ্বর, ডিমেরচর ও শরণখোলা এলাকা এখন হরিণ পাচারের নিরাপদ রুট।
শিকারিরা মাছ ধরার পারমিট নিয়ে নাইলনের ফাঁদ, বিষটোপ, চেতনানাশক, বড়শি ও গুলি ব্যবহার করছে।
ধরা পড়ার আগেই অধিকাংশ হরিণ সুন্দরবনের ভেতরেই জবাই করে খণ্ড খণ্ড করে মাংস বহন করা হয়।
️ সাম্প্রতিক অভিযানসমূহ
৬ মে: টাটের খাল (শ্যামনগর) থেকে ৬০০ পিস ফাঁদ ও ২টি নৌকা উদ্ধার।
৫ মে: পূর্ব সুন্দরবনের জ্ঞানপাড়া টহল ফাঁড়ির অভিযানে ১০ হাজার ফুট নাইলনের ফাঁদ উদ্ধার।
১৫ এপ্রিল: বরগুনার কাঠালতলী থেকে ৩৫ কেজি মাংসসহ রেজাউল ইসলাম আটক।
১৮ এপ্রিল: মোংলার জয়মণি থেকে ৩১ কেজি মাংস ও একটি হরিণের মাথা।
৮ এপ্রিল: ঠাকুরবাড়ি এলাকা থেকে ১১০ কেজি মাংস ও ২টি নৌকা জব্দ।
১২ মার্চ: মরালক্ষি খাল থেকে ৮০টি ফাঁদ ও ২৫ কেজি মাংসসহ ৫ জন আটক।
️ স্থানীয় ও বিশেষজ্ঞ মতামত
সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম বন বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশের অভিযোগ তুলে বলেন, “এদের আইনের আওতায় আনতেই হবে।”
সাংবাদিক মোহসিন উল হাকিম বলেন, “শিকারিদের তালিকা তৈরি করে পাশ পারমিট বন্ধ করতে হবে। গডফাদারদের শনাক্ত করে নজরদারি বাড়াতে হবে।”
বাগেরহাট রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি এস.এম. সাইফুল ইসলাম কবির বলেন, “বন বিভাগের তৎপরতা নেই বললেই চলে। স্থানীয়দের অংশীদারত্ব বাড়াতে হবে।”
⚖️ আইন কী বলে?
বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২ অনুযায়ী:
হরিণ শিকারে প্রথমবার: ৩ বছর জেল বা ৩ লক্ষ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড।
পুনরায়: ৫ বছর জেল বা ৫ লক্ষ টাকা জরিমানা।
বাঘ হত্যা: সর্বোচ্চ ১২ বছর জেল ও ১৫ লক্ষ টাকা জরিমানা।
️ বন বিভাগের অবস্থান
বাগেরহাট পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের ডিএফও কাজী মুহাম্মদ নুরুল করীম বলেন, “লোকবল সংকট থাকলেও নিয়মিত টহল চলছে। মাঝে মাঝে শিকারি ও মাংস জব্দ সম্ভব হচ্ছে।”